আসসালামু আলাইকুম প্রিয় পাঠক/পাঠিকা।
আাশা করি, আল্লাহর রহমতে আপনারা সবাই ভাল আছেন। আমরা যে অবস্থাতেই থাকিনা কেনো, সবসময় আলহামদুলিল্লাহ বলব।
আমরা আজকের পর্বে রাসূল সাঃ এর জন্ম ও ইতিহাস সম্পর্কে লিখেছি। আজকের লিখাটি আংশিক ছোট। আশা করি পড়তে অসুবিধা হবেনা।
রাসূল সালালাহু আলাইহি ওয়াসালাম মক্কায় কুরাইশ গোত্রের – বনি হাশিম বংশে ৫৭০ খ্রিস্টাব্দের ১২ই রবিউল আউয়াল, সোমবারে জন্মগ্রহণ করেন।
সে সময় বিবি আমেনা তার গৃহে শুয়ে ছিলেন। তিনি নিদ্রা অবস্থায় একটি অতি আশ্চর্য সুখ স্বপ্ন দেখছিলেন – ❝ যেনো একটি অপূর্ব আলোকে আকাশ-পাতাল আলোকিত হয়ে গেছে। সেই আলোকে চাঁদ – সূর্য, গ্রহ-তারা জ্বলমল করছে।
কার যেন আজ সুভাগমন। কার যেন আজ অভিনন্দন। যেন কোনো একজন বিরাট মহান অতিথির আগমনীর সময় আসন্ন হয়ে আসছে।
আর তারই অভ্যন্থনার জন্য আজ সারা বিশ্বব্যাপী একটি বিরাট আয়েজনের হইচই শুরু হয়ে গিয়েছে। ❞
হযরত আমেনা বিভর হয়ে স্বপ্ন দেখছিলেন, ❝ তিনি দেখলেন আসমানে একটি পূর্নচন্দ্র, পূর্ণিমার চাঁদ তো তিনি জীবনে অনেকবারই দেখেছেন। কিন্তু আজকের চাঁদের সাথে আগের দেখা পূর্ণিমার চাঁদ গুলোর যেন কোনো মিল নেই। অপূরূপ উজ্জ্বল, জোতিময় চাঁদ তিনি জীবনে আগে কোনোদিন দেখেনি। চাঁদটি যেন সবাইকে হতাশ ও নিরাশ করে দিয়ে বিবি আমেনার ঝীর্ণ কুটিরে নেমে আসছে। বিবি আমেনা দুহাত প্রসারিত করে দিলেন চাঁদের দিকে। আর চাঁদটি ঠিক তারই হাতে এসে ধরা দিল। আনন্দে আত্নহারা হয়ে গেলেন বিবি আমেনা স্বপ্নের মধ্যেই। ❞
বিবি আমেনা বলেছেন, “আমি বিষ্মিত নয়ণে তাকিয়ে দেখলাম পূর্ণিমার চাঁদের মতো আমার একটি পুত্র সন্তান ভুমিষ্ঠ হয়েছে। অথচ আমি জানতেই পারলাম না যে কখন কিভাবে কি হয়ে গেছে। তিনি আরো বলেছেন – আমার পুত্র মুহাম্মাদ (সাঃ) ভুমিষ্ঠ হওয়ার পূর্বে যখন আমি বুঝতে পারলাম যে আমার প্রসব কাল ঘনিয়ে এসেছে, তখন আমার মনে খুব ভয় হতে লাগল। কারন, সেসময় আমাকে সাহায্য করার মতো কোনো স্ত্রী লোক ছিল না। আর সন্তান প্রসব সম্বন্ধে আমার পূর্বের কোনো অভিজ্ঞতাও ছিল না। আমার ভিতরে তখন সামান্য একটু ব্যাথা অনুভব করছিলাম।”
“আর সে অবস্থায় আমি একটু ঘুমিয়ে পড়েছিলাম, নিদ্রীত অবস্থায় আমি নানারুপ আশ্চর্য স্বপ্ন দেখছিলাম। ইতিমধ্যে সুবহে সাদিকের সময় আমার কানে সমবিত কন্ঠের সুমধুর গজলের সূরের মরচোনায় আমার ঘুম ভেঙে গেল। এবং আমার কোলের কাছে আমার পূত্র মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে দেখতে পেলাম। কখন যে কিভাবে আমার সন্তান প্রসব হয়েছে আমি তার কিছুই বুঝতে পারিনি। আমি এক দৃষ্টিতে আমার নবজাতক সন্তানের দিকে তাকিয়ে রইলাম। কি অনুপম সে চেহারা, তার দিক থেকে আমি চোখ ফিরিয়ে নিতে পারছিলাম না। যেকোনো ব্যক্তি সে চেহারা একবার দেখলে তার বার বার দেখতে ইচ্ছে করবে এবং তার দিক থেকে সে চোখ ফিরিয়ে নিতে পারবে না। আমার মনে হলো এ তো কোনো মানব শিশু নয়। এ যেনো একটি নূরের ঝলক। আমার দু চোখ জুড়িয়ে গেল পুত্র মুহাম্মদের দিকে তাকিয়ে।”
জন্মের পর তার মা, দাদা আব্দুল মুত্তালিবের কাছে পুত্রের জন্মের সুসংবাদ দিলেন। তিনি খুব খুশি হলেন। তারপর সানন্দে তাকে নিয়ে কা’বা ঘরে গিয়ে আল্লাহর শাহি দরবারে দোয়া করলেন ও আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করলেন।
আরবের প্রথা অনুসারে আব্দুল মুত্তালিব তার নাতির জন্মের সপ্তম দিনে দুটি দুম্বা জবেহ করে শিশুর আকিকা ও নামকরন করলেন। কুরাইশ নেতৃবৃন্দ এবং আত্নীয় স্বজন কে আকিকা উপলক্ষে দাওয়াত করা হলো। কুরাইশ দলপতি ও আত্নীয় স্বজনেরা শিশু মুহাম্মদ (সাঃ) কে দেখে সকলেই বিষ্মিত হলেন। কারন, এমন সুন্দর শিশু তারা সমগ্র আরবে আর কখনোই দেখেনি। তারা সকলেই শিশুর সৌন্দর্যের প্রশংসা করলেন।
আব্দুল মুত্তালিব এর বন্ধুবান্ধব তাকে জিজ্ঞেস করলেন, “হে মুত্তালিব তোমার নাতির নাম কি রাখলে?”
আব্দুল মুত্তালিব উত্তর দিলেন, “মুহাম্মাদ।
মুহাম্মাদ অর্থ প্রশংসীত।”
একথা শুনে সকলে বিষ্মিতভাবে সমবেত কন্ঠে বলে উঠলেন, “মুহাম্মাদ…! সেকি…? এইরকম নাম তো আমরা এর পূর্বে আরব দেশে শুনিনি! কোনো দেবতার নামের সাথে মিল রেখে নাম রাখলে না কেনো?”
(তৎকালে কুরাইশদের মধ্যেই এই প্রথা ছিল যে, কোনো নবজাতক শিশুর নাম অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেব – দেবির নামের সাথেই মিলিয়ে রাখা হতো।)
বন্ধুদের কথার উত্তরে আব্দুল মুত্তালিব বললেন, “আমি বুঝতে পেরেছি যে, আমার এ স্নেহের নাতিটি বিশ্ববরণ্য হবে। সারা পৃথিবীতে এর মহিমা ও প্রশংসা ছড়িয়ে যাবে। সেজন্যই আমি ওর নাম রেখেছি মুহাম্মদ (সাঃ)।”
আব্দুল মুত্তালিব এর বন্ধু মহলের সকলেই শিশু মুহাম্মদ (সাঃ) কে দেখে, প্রশংসা করে চলে গেলেন।
❝শিশু নাতী সম্পর্কে দাদা আব্দুল মুত্তালিব যে ভবিষ্যত বাণী করেছিলেন, তা বৃথা যায়নি বরং বর্ণে বর্ণে সত্য প্রমানিত হয়েছে।
সারা পৃথিবীর মানুষ মুহাম্মদ (সাঃ) এর প্রশংসা করছেন। কিয়ামত পর্যন্তও করবেন। কেবল মানুষই নয় জ্বিন, পরী, দৈত্যদানব, পশু, পাখি এমনকি আসমানের অবনিত ফেরেশতারাও তার প্রশংসা করছে এবং করবে।
এমনকি স্বয়ং মহান রাব্বুল আল আমিন ও পবিত্র কালাম পাকে তার প্রশংসা করেছেন।❞
এদিকে হযরত আমেনা গর্ভাবস্থায় প্রায়ই স্বপ্নে দেখতেন কোনো মহাপুরুষ তাকে আদেশ করতেন যে, ❝তোমার পুত্রের নাম রেখ আহম্মদ।❞
তাই মা আমেনা তার ছেলের নাম রাখলেন ‘আহম্মদ’।
আর মা আমিনা তার শিশু পুত্রের নাম রেখেছেন আহম্মদ। আহম্মদ নামের অর্থ হচ্ছে, প্রশংসাকারী। মহানবী হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মতো আল্লাহর প্রশংসাকারী আজ পর্যন্ত সারা বিশ্বে আর একজন ও জন্মগ্রহণ করেনি।সুতরাং স্বার্থক নাম রেখেছিলেন মা আমিনা।
আসলে মক্কার কোরাইশদের নিকট এ দুটি নামই নতুন ও অদ্ভুদ বলে মনে হলেও, এ নাম দুটি মোটেও নতুন ছিল না। বরং এ নাম দুটি ছিল অনেক পুরাতন, কেননা বিশ্বজগৎ সৃষ্টির পূর্বেই আল্লাহ তায়া’লা তার জন্য এ নাম দুটি নির্ধারিত করে রেখেছিলেন। মহান আল্লাহপাক মানব জাতির আদি পিতা হযরত আদম (আঃ) কে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ’ আর হযরত মূসা(আ) এর প্রতি ‘তাওরাত’ এবং হযরত ঈসা (আ) এর প্রতি অবতীর্ণকৃত ‘ইঞ্জিল’ ও উভয় আসমানি কিতাবেই শেষ নবীর নাম আহম্মদ বলে উল্লেখ করে তাদেরকে শেষ নবীর আগমনের সুসংবাদ জ্ঞাপন করা হয়েছিল।
সুতরাং দেখা যাচ্ছে যে, মোহাম্মদ ও আহম্মদ নাম দুটি যথাক্রমে দাদা আব্দুল মুত্তালিব ও মাতা হযরত আমিনা কতৃক রাখা হলেও, আসলে এ নাম দুটি মহান আল্লাহুপাক কোটি কোটি বছর পূর্বে ইতার জন্য নির্ধারিত করে রেখেছিলেন।
(ভুল-ত্রুটি আল্লাহ মাফ করুক – আমিন)