জুমার দিনের ফজিলত

জুমাবার মুসলিম উম্মাহর সাপ্তাহিক ঈদের ও ইবাদতের দিন। জুমা আরবি শব্দ। বাংলায় এর শাব্দিক অর্থ একত্রিত হওয়া, সম্মিলিত হওয়া, কাতারবদ্ধ হওয়া ইত্যাদি প্রকাশ পায়।

প্রতি শুক্রবার মুসলমানরা একটি নির্দিষ্ট সময়ে মসজিদে একত্র হয়ে জামাতের সঙ্গে যে নামাজ ফরজরূপে আদায় করে, সেই নামাজকে জুমার নামাজ বলে। আর সে দিন কে জুমার দিন বলে।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ❝সূর্য উঠা দিনগুলোর মধ্যে জুমার দিন সর্বোত্তম। এ দিন আদম আলাইহিস সালামকে সৃষ্টি করা হয়েছে। এ দিন তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয়েছে এবং এ দিন তাঁকে জান্নাত থেকে বের করা হয়েছে।❞

জুমার দিনের ফজিলত অনেক বেশি। জুমার দিনের ফজিলতগুলো হাদিসের একাধিক বর্ণনায় ওঠে এসেছে। বিশেষ কিছু কারণে দিনটি মর্যাদার দাবি রাখে।

১. মুসলিম উম্মাহর জন্য উপহার

হজরত আবু হুরায়রা রা. বর্ণনা করেছেন,
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
❝আমরা সর্বশেষ উম্মাত কিন্তু কেয়ামতের দিন আমরা হব অগ্রগামী। যদিও সব উম্মাতকে আসমানি কিতাব দেওয়া হয়েছে আমাদের আগে, আর আমাদের কিতাব দেওয়া হয়েছে সব উম্মাতের শেষে।❞
আল্লাহ আমাদের জন্য এদিন সম্পর্কে হেদায়াতও দান করেছেন। এদিনের ব্যাপারে অন্যান্যরা আমাদের পেছনে রয়েছে। যেমন- ইয়াহুদিরা (আমাদের) পরের দিন (শনিবার) এবং খৃষ্টানরা তাদেরও পরের দিন (রবিবার)।’ (মুসলিম)

২. কোরবানির সাওয়াব পাওয়ার দিন

হজরত আবু হুরায়রা রা. বর্ণনা করেছেন,
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
❝জুমার দিনে ফেরেশতাগণ বিশেষ রেজিস্টার নিয়ে মসজিদের প্রতিটি দরজায় দাঁড়িয়ে যান। তাঁরা মসজিদে আগমনকারী মুসল্লিদের নাম ধারাবাহিকভাবে লিখতে থাকেন। এরপর যখন ইমাম এসে যান, তখন তারা রেজিস্টার বন্ধ করে খুতবা শুনতে থাকেন।
যে সবার আগে মসজিদে প্রবেশ করে, সে একটি উট আল্লাহর রাস্তায় কোরবানি করার সাওয়াব লাভ করে।
যে ২ নম্বরে প্রবেশ করে, সে একটি গরু আল্লাহর রাস্তায় কোরবানি করার সাওয়াব পায়।
যে ৩ নম্বরে প্রবেশ করে, সে একটি দুম্বা কোরবানি করার সাওয়াব পায়।
যে ৪ নম্বরে প্রবেশ করে, সে একটি মুরগি দান করার সাওয়াব লাভ করে।
আর যে ৫ নম্বরে প্রবেশ করে, সে একটি ডিম আল্লাহর রাস্তায় দান করার সাওয়াব পায়।❞

(বুখারি, মুসলিম, মুসনাদে শাফি, মুসনাদে হুমাইদি)

৩. গুনাহ মাফের দিন

হজরত আবু হুরায়রা রা. বর্ণনা করেছেন,
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
❝যে ব্যক্তি গোসল করে জুমার নামাজে এলো,
তারপর সাধ্যমত (সুন্নাত) নামাজ আদায় করলো,
এরপর ইমামের খুতবাহ শেষ হওয়া পর্যন্ত চুপ থাকলো,
এরপর ইমামের সঙ্গে নামাজ আদায় করল,
এতে তার দুই জুমার মধ্যবর্তী সময়ে তার সব গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে।❞
(আবু দাউদ)

৪. দোয়া কবুলের দিন

জুমা দিনের ফজিলতের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিকটি হলো –
এ দিনে এমন একটি সময় রয়েছে যখন দোয়া করলে তা কবুলের আশা করা যায়।

জুমার দিনে দোয়া কবুল হওয়ার সে মহামূল্যবান সময় কখন?
এ সম্পর্কে প্রায় অনেকগুলোই মতামত পাওয়া যায়। তবে সর্বাধিক প্রসিদ্ধ মত হলো,”আসরের নামাজের পর থেকে মাগরিব পর্যন্ত সময়।”

হজরত আনাস ইবনু মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন,
নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
❝জুমার দিনের যে মুহুর্তে দোয়া কবুলের আশা করা যায়, তা আসরের পর থেকে সূর্যাস্তের মধ্যে তালাশ করো।❞
(তিরমিজি, মুসলিম, মিশকাত, তালিকুর রাগিব)

হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন,
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
❝জুমার দিনে একটা এমন সময় আছে, যে সময়ে কোনো মুমিন বান্দা আল্লাহর কাছে ভালো কোনো কিছু চাইলে, অবশ্যই আল্লাহ তা দান করবেন।❞
(মুসলিম, মুসনাদে আহমাদ)

৫. জুমা না পড়ার পরিণতি

হজরত আবদুল্লাহ ইবনু ওমর ও আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন,
তারা উভয়ে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে তার মিম্বারে দাঁড়িয়ে বলতে শুনেছেন,
❝যারা জুমার নামাজ ছেড়ে দেয়, তাদেরকে এ অভ্যাস ত্যাগ করতে হবে। তা না হলে, আল্লাহ তাদের অন্তরে সীলমোহর মেরে দিবেন এবং তারা গাফিলদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে।❞
(মুসলিম)

শুক্রবার অন্য দিন থেকে কেন আলাদা?

মালেক ইবনে শিহাব থেকে বর্ণনা করেছেন,
তিনি ইবনে সাব্বাক থেকে বর্ণনা করেছেন,
রাসূলুল্লাহ (সা.) কোনো এক জুমার দিনে বললেন, ❝হে মুসলিম সম্প্রদায়! আল্লাহ তায়ালা এই দিনটিকে ঈদের দিন হিসেবে নির্ধারণ করেছেন।❞

আল্লাহ তায়ালা নভোমণ্ডল, ভূমণ্ডল ও গোটা জগতকে ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন। এই ছয় দিনের শেষ দিন ছিল জুম্মার দিন। জুমার দিনের মৃত্যুর ফজিলত ও রয়েছে।
এই দিনেই আদিপিতা হযরত আদম (আ.) কে সৃষ্টি করা হয়েছে। এ দিনেই তাঁকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয়। আর এই দিনেই তাকে জান্নাত থেকে পৃথিবীতে নামানো হয়। (মুসলিম, হাদিস : ৮৫৪)

কেয়ামত শুক্রবারেই সংঘটিত হবে। আল্লাহ তায়ালা প্রতি সপ্তাহে মানবজাতির সমাবেশ ও ঈদের জন্য এ দিন নির্ধারণ করেছিলেন।
আল্লাহপাক কোরআন পাকে ইরশাদ করেন,
❝হে মুমিনগণ জুম্মার দিনে যখন নামাজের আজান দেয়া হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণের উদ্দেশেও দ্রুত ধাবিত হও এবং ক্রয়-বিক্রয় ত্যাগ কর।❞
সূরা জুমা, আয়াত নং-৯।

জুমার দিনে আজানের আগেই সব কর্মব্যস্ততা ত্যাগ করে জুমু’আর নামায আদায়ের প্রস্তুতি গ্রহণ করে মসজিদে গমন করা ঈমানী দায়িত্ব। সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, জুমার দিন আগে আগে মসিজদে যাওয়া। দিনটি ইবাদত-বন্দেগি ও ভালো কাজে অতিবাহিত করা।

জুম্মার দিনের আমলগুলো কি কি? বিস্তারিত নিয়ে, খুব শীঘ্রই লিখা হবে ইনশাআল্লাহ্‌। সেই পর্যন্ত ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, আল্লাহ্‌ হাফেজ।

কুইজ প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে, নিচের বাটনে ক্লিক করুন।

This Post Has One Comment

  1. gous uddin

    ভালো

Leave a Reply