ইমাম গাজ্জালী (রঃ) এর চরিত্র রক্ষার ঘটনা

ইমাম গাজ্জালী (র.) সম্পর্কে আজ আমরা একটি ইসলামিক গল্প জানব। এটি আসলে একটি সত্য ইসলামিক ঘটনা, যা ইমাম গাজ্জালীর সাথে ঘটেছিল। আসুন, শুরু করা যাক।

একটি সুন্দরী যুবতী মেয়ে আল্লাহর একজন অলিকে ঘরের মধ্যে আটকে দরজা বন্ধ করে দিল।

এরপর সেই মেয়েটি অর্ধনগ্ন অবস্থায় আল্লাহর অলির কাছে এসে নিজেকে সঁপে দিতে চাইল। সেই সুন্দরী মেয়ের হাত থেকে নিজের চরিত্র রক্ষা করার জন্য আল্লাহর অলি এমন এক কাণ্ড করে বসলেন; যা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। প্রিয় পাঠক, আল্লাহর অলি ইমাম গাজ্জালী (র.) এর সেই জগৎ বিখ্যাত চরিত্র রক্ষাকারী ঘটনাটি জানতে হলে, লিখাটি শেষ পর্যন্ত পড়ুন।


এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারের এক সুন্দরী যুবতী মেয়ে ইমাম গাজ্জালীর প্রতি প্রবল ভাবে আকৃষ্ট ছিল। ইমাম গাজ্জালী ছিলেন টগবগে যুবক। সে যুবতী জানত পরপুরুষের প্রতি আকর্ষণ অনুভব করা একটি গুনাহের কাতারেই পড়ে। কিন্তু ইমাম গাজ্জালীর চারিত্রিক সৌন্দর্য দেখে সে মোহে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ল। সেই যুবতী ইমাম গাজ্জালীকে নানাভাবে প্রভাবিত করার চেষ্টা করে। কিন্তু ইমাম গাজ্জালী সেই যুবতীর দিকে কখনো চোখ তুলেও তাকাননি।

এতে যুবতীর জেদ দিনে দিনে বাড়তে লাগল। একদিন সেই নারী তার খালি বাড়িতে ইমাম গাজ্জালীকে আসতে বলল। কিন্তু ইমাম গাজ্জালী রাজি হলো না। তার কিছুদিন পর যুবতী তাকে বাড়িতে আনার জন্য একটি চক্রান্ত করল। সে তার দাসীকে শিখিয়ে দিলো, ওই বাড়িতে যে যুবক আছে (ইমাম গাজ্জালী) তাকে গিয়ে বলবে এই বাড়িতে ছোট্ট একটি বাচ্চা বিপদে পড়ে কান্না করছে। আপনি এসে তাকে উদ্ধার করুন। এইভাবে বললে সে আমার ঘরে চলে আসতেও পারে। দাসী তখন যুবতীর নির্দেশ যথাযথভাবে পালন করল। সে ইমাম গাজ্জালী (র.) কে খালি বাড়িতে আনতে সক্ষম হল।


এরপর সে যুবতী ইমাম গাজ্জালী (র.) কে একটি ঘরে বন্ধ করে ফেলল। তার কাছে নিজেকে সঁপে দিতে চাইল এবং তার কাছে আসার চেষ্টা করল। কিন্তু ইমাম গাজ্জালী (র.) সাথে সাথে আল্লাহ তায়ালার কাছে সাহায্য চাইলেন এবং নিজের চরিত্র রক্ষার উপায় খুঁজতে থাকেন।

যুবতী তখন ইমাম গাজ্জালীকে বলল আজ যদি আপনি আমার মনোবাসনা পূর্ণ না করেন; তবে আমি চিৎকার চেঁচামেচি করে এলাকার সবাইকে জানিয়ে দেবো যে আপনি আমার চরিত্র হরণ করার জন্য আমার বাড়িতে এসেছিলেন। কিন্তু ইমাম গাজ্জালী (র.) কোনভাবেই তার প্রস্তাবে রাজি হল না বরং আশেপাশে পথ খুঁজছিলেন, কিভাবে এর থেকে নিস্তার পাওয়া যায়? কিন্তু কোন পদ পাচ্ছিলেন না। তিনি আল্লাহর উপর ভরসা রাখলেন। কেননা আল্লাহ চাইলে সব কিছুই সম্ভব।

 

হঠাৎ তার মাথায় বুদ্ধি এলো। তিনি যুবতীকে বললেন তিনি শৌচাগারে যাবেন। যুবতী তাকে বেশি দেরি করতে মানা করল। তবে যাবার সম্মতি দিল। ইমাম গাজ্জালী শৌচাগারে গিয়ে সেখানে থাকা নোংরা ময়লা আবর্জনা, নোংরা পানি গায়ে মাখতে শুরু করলেন। যাতে তার শরীর থেকে দুর্গন্ধ বের হতে থাকে। এরপর তিনি যুবতীর কাছে ফিরে এসে বললেন, এবার আমি প্রস্তুত।

তার শরীরে এত ময়লা দেখে এবং দুর্গন্ধের জন্য যুবতী তখন ইমাম গাজ্জালীকে তার বাড়ি থেকে বের করে দিল। ইমাম গাজ্জালী অত্যন্ত খুশি হলেন এবং আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করতে লাগলেন।

বাড়ি থেকে চলে আসার সময় ইমাম গাজ্জালীকে সেই মেয়েটি প্রশ্ন করল, আপনি এমন কেন করলেন? তখন ইমাম গাজ্জালী (র.) বললেন, “দুনিয়ায় যিনাহর পাপ বহন করে জাহান্নামে বসে দুর্গন্ধযুক্ত পুঁজ খাওয়ার চেয়ে দুনিয়ার এই নোংরা পানি অনেক ভাল”। এই কথা শুনে মেয়েটির চোখে পানি এসে গেল।

 

ইমাম গাজ্জালী সেদিন খুশিমনে ওস্তাদের কাছে উপস্থিত হলেন। পাঠ চলাকালীন ওস্তাদ সবাইকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমাদের মধ্যে কে এত সুন্দর সুগন্ধি মেখে এসেছে; যে পুরো কক্ষ সুরভীময় হয়ে গেছে? আগে কখনো এমন সুগন্ধ আমি পাইনি। এটি কোন সাধারণ সুগন্ধি নয়! আমি মেশক অম্বরের সুগন্ধি গায়ে মেখেছি আর এই সুগন্ধি মেশক অম্বরের চেয়েও তীব্র এবং পবিত্র।

তারপর ওস্তাদ একজন একজন করে সব ছাত্রের কাছে গেলেন এবং সুগন্ধির উৎস খোঁজার চেষ্টা করলেন। ইমাম গাজ্জালীর কাছে গিয়ে ওস্তাদ বললেন, সুগন্ধিটা তো তোমার গায়ে থেকে আসছে। তুমি এতক্ষণ পর্যন্ত কিছু বলছিলে না কেন! এদিকে এসো। আমার কাছে এসো। ইমাম গাজ্জালী ভয়ে ভয়ে ওস্তাদের কাছে গেলেন। তিনি মনে মনে ধরেই নিলেন আজ তাকে সবার সামনে অপমানিত হতে হবে। কেননা বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় সে তার শরীর ভালো মতো পরিষ্কার করার সময় পাইনি।

ইমাম গাজ্জালীকে অবাক করে দিয়ে তার ওস্তাদ জিজ্ঞেস করলেন তুমি এত সুন্দর সুগন্ধী মেখে এসেও কেন স্বীকার করছ না? সত্যি করে বলোতো এই সুগন্ধী তুমি কোথায় পেয়েছ?

ইমাম গাজ্জালী তার কথায় ভয় পেয়ে কাঁদতে শুরু করলেন। এবং সকালের সেই সুন্দরী যুবতীর ঘটনা বর্ণনা করতে শুরু করলেন। সবকিছু শুনে ওস্তাদ তখন ইমাম গাজ্জালীকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করলেন।

তারপর ওস্তাদ সব ছাত্রকে ডেকে এনে বললেন, তোমরা যদি কেউ জান্নাতি সাথী দেখতে চাও তবে আমার এই যুবক ছাত্রকে দেখো। আল্লাহর ভয় ও তাকওয়ার পরীক্ষায় সে এই বয়সেই উত্তীর্ণ হয়েছে। যে বয়সে যুবকরা পাপের সাগরে ডুবে থাকে। সেই বয়সে পাপ থেকে বেঁচে থাকার জন্য আল্লাহ তায়ালা তার গায়ে জান্নাতের সুগন্ধী ঢেলে দিয়েছেন। সুবহানআল্লাহ।

ওস্তাদ তখন ইমাম গাজ্জালীকে জড়িয়ে ধরে দুই হাত তুলে আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করে বললেন, হে আল্লাহ আপনি আমার এই ছাত্রকে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ আলেম এর অন্তর্ভুক্ত করুন। আল্লাহ তায়ালা সাথে সাথে ওস্তাদের দোয়া কবুল করে নিলেন। পরবর্তীতে ইমাম গাজ্জালী (র.) পুরো পৃথিবীর ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে রইলেন এবং তিনি ছিলেন জগৎ বিখ্যাত আলেমদের মধ্যে একজন। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরও যেন চরিত্রের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ করেন। আমিন ।

Leave a Reply