রাসুল (সা.) এর জন্মের সময় যে অলৌকিক ঘটনাগুলো ঘটেছিলো পৃথিবীতে…

আসসালামু আলাইকুম, কেমন আছেন? জানেন কী, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) জন্মের সময় ফেরেশতাদের সাথে শয়তানের তুমুল ঝগড়া লেগে যায়। আর কেনোই বা ঝগড়া লাগলো? এমন কী হয়েছিল যে, শয়তান সেদিন পাগলের মত হয়ে গেছিলো….? আজকের ইসলামিক গল্পে আমরা জানব, রাসুল (সা.) এর জন্মের সময় যে অলৌকিক ঘটনাগুলো ঘটেছিলো পৃথিবীতে….

❝যেদিন ভোরবেলায় মহানবী (সা.) জন্ম নেন, সেই দিন বিশ্বের সবগুলো মূর্তি মাটির দিকে নত হয়ে পড়ে।

❝ইরানের রাজার বিশাল প্রাসাদ এর বারান্দা কেঁপে ওঠে এবং ছাদের চৌদ্দটি প্রাচীর ধসে পড়ে।

❝বিশ্বের সব সম্রাটের সিংহাসন উল্টে পড়েছিল।

❝বিশ্বের সব রাজা বোবা হয়ে পড়েছিলেন। অর্থাৎ তারা কথা বলতে পারছিলেন না।

❝সেদিন গণকদের সব জ্ঞান লুপ্ত হয় এবং জাদুকরদের জাদু গুলো অকার্যকর হয়ে পড়ে।

❝সেই রাতে সৌদি আরব থেকে এক প্রকার আলো দৃশ্যমান হয়েছিল, যা সারা বিশ্বের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে।

❝বিশ্বনবী (সা.) জন্মের সময় শয়তান তার সন্তানদের মধ্যে আর্তনাদ করে ওঠে।

»»»
ফলে সবগুলো শয়তান তার কাছে এসে বলে, হে শয়তান সর্দার, কেন এত পেরেশান বা উদ্বিগ্ন হয়েছ? সে বলল, কাল রাতে কি হয়েছিল?

তখন শয়তান বলল, রাতের প্রথম থেকে এই পর্যন্ত দেখেছি যে আকাশ এবং জমিনের অবস্থা বদলে গেছে। ভূপৃষ্ঠে ঘটে গেছে এক বিরাট ঘটনা। ঈসা (আ.) ঊর্ধ্ব আকাশে চলে যাওয়ার পর আর কখনো এত বড় ঘটনা ঘটেনি। সবাই গিয়ে খোঁজখবর নাও যে, কি ঘটেছে!

তখন শয়তানরা চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে এবং ফিরে এসে বলে, কই! কিছুই তো দেখলাম না।
বড় শয়তান বা শয়তানের নেতা তখন বলল, “এই বিষয়ে খোঁজ-খবর নেয়া আমাদের কাজ।” তারপর সে পবিত্র মক্কার কাবা ঘর সংলগ্ন অঞ্চলে আসলো।

সে দেখল যে, ফেরেশতারা কাবাঘরের চারিদিকে ঘিরে রেখেছেন। শয়তান সেখানে ঢুকতে চাইলে ফেরেশতারা হুংকার দিলো। ফলে সে ফিরে আসে এবং চড়ুই পাখির মত ছোট হয়ে হেরা পর্বতের দিক থেকে সেখানে প্রবেশ করতে চায়।

জিবরাঈল (আ.) বললেন, “ওরে অভিশপ্ত! ফিরে যা।”

সে বলল, “হে জিবরাঈল! আমার একটা প্রশ্ন আছে। বলো তো আজ রাতে কি ঘটেছে?”

জিব্রাইল (আ.) বললেন, সর্বশ্রেষ্ঠ নবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (স.) আজ রাতে জন্ম নিয়েছেন।

শয়তান প্রশ্ন করল, তার মধ্যে কি আমার কোন কর্তৃত্বের (শয়তানির) অংশ আছে?

জিব্রাইল (আ.) বললেন, না, কখনই সম্ভব না।

সে তথা ইবলিশ বা শয়তান আবার প্রশ্ন করল, তার উম্মতের মধ্যে কি আমার কোন অংশ আছে?

জিব্রাইল (আ.) বললেন, হ্যাঁ।

ইবলিশ বলল, আমি সন্তুষ্ট হলাম। «««

❝হযরত হালিমা বর্ণনা করেন “শিশু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (সা.) কে আমার গৃহে আনার সাথে সাথেই রহমত-বরকত প্রকাশ হতে লাগলো। এত পরিমাণ দুধ নির্গত হলো যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) এবং তার দুধ ভাই একান্ত তৃপ্তির সাথে দুধ পান করে ঘুমিয়ে পড়তেন। আর উটনীর দিকে চেয়ে দেখতে পাই, সেগুলোর স্তন দুধে পরিপূর্ণ হয়ে গেছে।”

বিবি হালিমা বলেন, “আমার স্বামী উটনীর দুধ গ্রহণ করলেন এবং আমরা তৃপ্তির সাথে তা পান করে সারারাত আরামে কাটালাম। দীর্ঘদিন পর এটাই প্রথম রাত্রি যাতে আমরা শান্তিতে ঘুমিয়ে পড়লাম।”

আমার স্বামী বললেন, “হালিমা তুমি খুবই ভাগ্যবান এক শিশু নিয়ে এসেছ।”

আমি বললাম, “আমারও এটাই ধারনা। এই শিশু অত্যন্ত সৌভাগ্যবান।”

❝বিবি হালিমা আরো বললেন, “মক্কা থেকে ফেরার পথে শিশু মুহাম্মদকে কোলে নিয়ে যে দূর্বল বাহনটিতে চলতে লাগলাম, মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.) এর বরকতে বাহনটি এত দ্রুত চললো যা সবার বাহনকেই হার মানলো।”

আমার সাথী মহিলারা আশ্চর্য্য হয়ে বলতে লাগলো, এটা কি সেই দুর্বল সোয়ারি; যার উপর আরোহণ করে তোমরা প্রথম এসেছিলে!

তারপর বাড়ি এসে দেখলাম, সমস্ত বখরিগুলো দুধে পূর্ণ হয়ে গেছে। অথচ কিছুক্ষণ পূর্বে সেগুলো দুধশূন্য ছিল।

এই ঘটনা দেখে, আমার গোত্রের লোকেরা তাদের রাখালদেরকে নির্দেশ দেয় যে, তোমরাও তোমাদের পশু ঐ জায়গায় চড়াও; যেখানে হালিমার বখরি চড়ে। কিন্তু তা তো চারণক্ষেত্রের বিশেষত্ব ছিল না। বরং গায়েবি বরকতের মধ্যে তা নিহিত ছিল। তা ওই সমস্ত লোক কোথায় পাবে! এইভাবে প্রায় অনেক তার বরকতের ঘটনা গুলো প্রত্যক্ষ করতাম।

❝হযরত হালিমা বর্ণনা করেছেন, তিনি কখনও শিশু মোহাম্মদকে উলঙ্গ অবস্থায় রাখতেন না। সেইরূপ করলেই তিনি চিৎকার করে কাঁদতেন। যতক্ষণ পর্যন্ত তার শরীরের উপর চাদর টেনে না দেয়া হতো, ততক্ষণ তিনি ক্রন্দন থামাতেন না।

হালিমা বলেন, “যেদিন থেকে আমি জানতে পারলাম শিশু মুহাম্মদ সাঃ উলঙ্গ থাকতে পছন্দ করেন না; সেদিন থেকে আর কখনো তাকে উলঙ্গ রাখেনি। তার দেহ আবৃত করে রাখার জন্য সর্বদাই সজাগ থাকতাম।”

❝হযরত আব্বাস বিন আব্দুল মোতালিব (রা.) তা’আলা বর্ণনা করেছেন, তিনি রাসূলুল্লাহ (স.) কে বলেছেন আপনার নবুয়তের একটিমাত্র নিদর্শন ছিল আমার ইসলাম গ্রহণের কারণ। তা হলো, তিনি দেখলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) শৈশব অবস্থায় আঙ্গুলি সংকেতে চাঁদকে ইশারা করেছেন। রাসূলুল্লাহ (সা.) যেই দিকেই তার আঙ্গুলি ঘুরাচ্ছিলেন; চাঁদও ঠিক সেই দিকেই আসা যাওয়া করছিল। রাসূল এবং নবী হওয়ার এই একটি উজ্জ্বল প্রমাণ।

❝শিশু মুহাম্মদ হালিমার গৃহে থাকা অবস্থায়, তিনি কখনোই তার উভয় স্তন থেকে দুধ পান করেন নি। সব সময় তিনি একটি স্তন থেকে দুধ পান করতেন অপরটি তার দুধ ভাই এর জন্য রেখে দিতেন। ন্যায়বোধের এমন চরম দৃষ্টান্ত পৃথিবীতে খুবই বিরল। সত্যিই এটা একজন মহামানব এর পক্ষেই সম্ভব।

❝শিশু রাসূলুল্লাহ (সা.) এর দ্রুত বর্ধনশীল দৈহিক অবস্থাও একটি লক্ষণীয় বিষয়। দুই মাস বয়সের সময় তিনি অন্যান্য শিশুদের সাথে হামাগুড়ি দিয়ে ফিরতে লাগলেন। তিন মাসের সময় দেয়াল ধরে হাটতে লাগলেন। যখন তার বয়স মাত্র পাঁচ মাস তখন বিনা অবলম্বনে হাটতে শিখলেন। সাত মাস বয়সের সময় তিনি ফিরতে লাগলেন এবং মাত্র আট মাস বয়সের সময় তিনি কথা বলতে সক্ষম হন। তার এই গুনগুলো নিশ্চয়ই তার মজিজার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত এবং তিনি উম্মতে মুহাম্মদে শাফায়াতের কান্ডারী।

❝দোজাহানের সম্রাট রাসুলুল্লাহ (সা.) অতি শৈশবকাল থেকেই একান্তভাবে পাক-সাফ থাকতেন। সাধারণত শিশুরা নিজের প্রস্রাব-পায়খানা নিজের অঙ্গে-প্রত্যঙ্গে কিংবা জামা-কাপড়ে মাখে। এমনকি তা মুখে দিয়ে থাকে। রাসুলুল্লাহ (সা.) এর দুধ মাতা হালিমা (রা.) তিনি বর্ণনা করেন, শিশু মুহাম্মদ কখনই বিছানায় প্রস্রাব-পায়খানা করেন নি। নিজের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ এবং কাপড় অপবিত্র করেন নি। তাকে বিছানা থেকে উঠিয়ে দুই পায়ের উপর দাঁড় করানো ব্যতীত কখনো পায়খানা-প্রস্রাব করতেন না। সাথে সাথে তাকে পরিষ্কার করে দিতাম। তিনি যে আল্লাহ তায়ালার সৃষ্টি মানুষ তাতে আমার কোন সন্দেহ ছিল না। সুতরাং সর্বাবস্থায় পাক-সাফ থাকা তারপক্ষে অস্বাভাবিক কিছু নয়।

❝মহানবী (সা.) এর দেহ নূরের তৈরী বলে তার শরীরের কোন ছায়া ছিল না। মানুষের ছায়া কত ময়লা আবর্জনার উপর পতিত হয়। কত পশুপাখি অথবা মানুষের পায়ের তলায় ছায়া পতিত হবার সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু মহানবী (সা.) এর পবিত্র দেহের ছায়া এইভাবে অপদস্ত হওয়া আল্লাহ তায়ালার অভিপ্রেত নয়। এই জন্য আল্লাহ তাআলা তার দেহ ছায়াহীন করে তৈরি করেছেন। এই কারণেই তার দেহের উপর কখনই মাছি বসে নি। কেননা মাছি অপবিত্র বস্তু থেকে জন্মলাভ করে। তাই মাছির দেহ অপবিত্র। তাই রাসূলুল্লাহ (সা.) এর শরীরে এটি কখনো স্থান পায়নি।

❝হযরত মাইশা (রা.) ছিলেন হযরত খাদিজা (রা.) এর দাস। তাকে খাদিজা (রা.) রাসুলুল্লাহ (সা.) এর খেদমতে পেশ করেন। তিনি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন অলৌকিক ঘটনা প্রত্যক্ষ করে বিস্ময়ে অভিভূত হয়েছেন। তিনি দেখেছেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) যখন পথ দিয়ে চলতেন তখন একখণ্ড মেঘ তার মাথার উপরে ছায়া বিস্তার করে তার সঙ্গে ভেসে বেড়াতো। মানুষের আকৃতির এইযে অস্বাভাবিক কার্যকলাপ, এটা নিঃসন্দেহে রাসুলুল্লাহ (সা.) এর একটি অনেক বড় মজিজা; যা নবীর শৈশবকাল থেকে লক্ষ্য করা যায়।

আজকের পর্বে বর্ণিত প্রত্যেকটি বিষয়েই রাসুলুল্লাহ (সা.) এর শৈশবকালের মজিজা। তবে এইগুলো স্থায়ী নয়। বিশ্ব নবীর জীবনের শ্রেষ্ঠ মজিজা হচ্ছে পবিত্র আল কুরআন; যা কিয়ামত পর্যন্ত থাকবে। তাছাড়া আমরা তার জীবনী আলোচনা করলে দেখতে পাই, মহানবী (সা.) এর পুরো সংগ্রামী জীবনটাই এক অলৌকিকতায় পরিপূর্ণ। যা তার নবুয়তের জন্য যথেষ্ট প্রমাণ বহন করে।

সুপ্রিয় পাঠক/পাঠিকা এই ছিল আমাদের আজকের পর্ব। লিখাটি ভালো লেগে থাকলে অবশ্যই একটি কমেন্ট করবেন। ধন্যবাদ সবাইকে মনোযোগ সহকারে লিখাটি পড়বার জন্য….

এখান থেকেও কুইজে প্রশ্ন আসতে পারে। তাই নিচের লিংকে ক্লিক করে পড়ুন।

Leave a Reply