আসসালামু আলাইকুম, আপনারা কেমন আছেন? আশা করি আল্লাহ্র অশেষ রহমতে, আপনারা সকলেই ভালো আছেন।
প্রিয় পাঠক, বলুন তো মানুষ মারা যাওয়ার কয়েক মুহুর্ত পরেই সে কি কি দেখতে পায়? মানুষের রুহ আবার কি এই দুনিয়ায় আসতে পারে? কবরে প্রশ্নের জবাব দেওয়ার সময়, মৃত মানুষ কি পুনরায় জেগে ওঠে। কবরে প্রশ্ন না দিতে পারলে তার সাথে কি হয়? এগুলো জানতে হলে লিখাটি শেষ পর্যন্ত পড়ুন।
মানুষ যখন মারা যায়, তখন তার দেহ থেকে তার রুহ চলে যায়। এই রুহ একটি কঠিন যাত্রার মধ্য দিয়ে যায়। এরপর তার দেহের সাথে মিলিত হওয়ার জন্য পুনরায় রুহ আবার কবরে নেমে আসে।
যখন রুহ মাটিতে নেমে আসে, তখন এটি তার জানাযার সাক্ষী হয়। মৃত্যুর পর আপনার মৃতদেহ যখন মাটিতে পড়ে থাকবে এবং আপনাকে দাফনের জন্য প্রস্তুত করা হবে, তখন আপনি সব কিছুই দেখতে পারবেন এবং শুনতে পারবেন। এমনকি আপনি সব কিছু অনুভব করতে পারবেন।
যখন মানুষ আপনার দেহটিকে কবরে রাখার জন্য নিয়ে যাবে, তখন আাপনার রুহ সেখানে আপনার দেহের সাথে পুনরায় মিলিত হওয়ার জন্য কবরে নেমে আসবে। তারপর আপনার প্রিয়জন, আপনার বন্ধুরা, যারা আপনার জানাযায় উপস্থিত থাকবে; তারা হাত দিয়ে মাটি তুলতে শুরু করবে এবং আপনার ওপর মাটি ফেলতে শুরু করবে।
আপনাকে কবরে রাখার পর, আপনার উপরে মাটি ফেলা হবে। তাই তখন আপনিও তা অনুভব করতে পারবেন। আপনি সম্পূর্ণ রূপে আবৃত না হওয়া পর্যন্ত, তারা আপনার উপর মাটি ফেলতে থাকবে। এরপর আপনি কবরের ভেতর মাটি দ্বারা আচ্ছাদিত হতে থাকবেন। তখন আপনার চেতনা থাকবে এবং আপনি জীবিত থাকবেন। অবশ্যই শারীরিক ভাবে জীবিত নয়, তবে আপনার রুহ সবকিছু অনুভব করবে। এরপর তারা হাঁটতে শুরু করবে, তারা চলে যাবে, আপনি তাদের পদধ্বনি শুনতে পাবেন….।
যেমনটি মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন, “যখন তারা চলে যাবে, তোমরা তাদের পায়ের শব্দ শুনতে পাবে। এবং তোমরা সেখানে সম্পূর্ণ ভাবে একা থাকবে।”
অন্ধকার ও নিরবতায়। কি হবে সে সময়? মুনকার ও নাকির নামের দুজন ফেরেশতা, তখন আপনার কাছে আসবে। তারা আপনাকে তিনটি প্রশ্ন জিজ্ঞেস করবে। সম্ভবত এগুলোই হবে আপনাকে জিজ্ঞেস করা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন এবং এর উত্তরগুলো হবে আপনার দেওয়া সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উওর।
আর সেই প্রশ্ন গুলো হলো, “তোমার দ্বীন কি? তোমার রাসুল কে? এবং তোমার রব কে?”
যদি আপনি এই তিনটি প্রশ্নের সঠিক উত্তর দেন, তবে আপনার জন্য কবর হবে শান্তির স্থান। যতদিন না বিচার দিবসের জন্য শিঙ্গা বাজানো হবে এবং আপনাকে কবর থেকে ওঠানো হবে, ততদিন আপনি শান্তি ও আনন্দ পাবেন।
কিন্তু আপনি যদি এই তিনটি প্রশ্নের উত্তর সঠিকভাবে দিতে না পারেন, তাহলে কবর আপনার জন্য অনেক কষ্টের স্থান হবে। তাই আমাদেরকে এই প্রশ্ন গুলোর সঠিক উত্তর দিতে হবে। কিন্তু এখানে একটি সমস্যা আছে।
আমরা অনেকেই মনে মনে ভাবি, “আমি অনেক ভালো। কারন আমি একজন মুসলিম। আমি এই সবগুলো প্রশ্নের উত্তর জানি এবং আমি সঠিক ভাবে এসবের উত্তর দিতে পারবো।” – এটি অবশ্যই একটি বড় সমস্যা।
কারন কবরে এভাবে প্রশ্নের উত্তর দেওয়া যায় না। এব্যপারে অনেক আলেম বলেছেন, “আপনি জিহবা দিয়ে উওর দিতে পারবেন না। এমনকি আপনার মস্তিষ্ক দিয়েও উওর দিতে পারবেন না। উত্তর দিতে হবে আপনার অন্তর দিয়ে। মানুষের অন্তরে যা আছে, সেই মূহুর্তে সব বেরিয়ে আসবে।
আপনি যদি সত্যিকার অর্থে মুসলমান হওয়ার চেষ্টা না করেন; একজন প্রকৃত মুসলমান হিসেবে ইসলাম অনুশীলন করার চেষ্টা না করেন; তাহলে ইসলাম সত্যিই আপনার অন্তর এ ছিলো না।
তাই আমাদের নিশ্চিত করতে হবে যে, আমরা আমাদের সাধ্য অনুযায়ী প্রকৃত মুসলমান হওয়ার চেষ্টা করছি।আমি একদম নির্ভুল হওয়ার কথা বলছি না। আমি আপনাদেরকে আলেম হওয়ার জন্য বলছি না। আমি আপনাদেরকে নবি (সাঃ) এর মতো শ্রেষ্ঠ চরিএের অধিকারী হতে বলছি না। কিন্তু আমাদের কে সত্যিকার অর্থে একজন মুসলিম হওয়ার চেষ্টা করতে হবে।
যাতে কবরে, যখন এ ফেরেশতারা আমাদের কাছে আসবে এবং প্রশ্নগুলি করবেন তখন যেন আমাদের অন্তর থেকে স্বাবাভিকভাবেই যেন সঠিক উত্তর আসে। এই তিনটি প্রশ্নের পরীক্ষায় উওীর্ণ হওয়ার পর কি হবে?
পাঁচটি সু-সংবাদ সহ আল্লাহ’র পক্ষ থেকে একটি আদেশ আসবে।
প্রথমত, কবর থেকে জান্নাত শুরু হবে।
দ্বিতীয়ত, যা ঘটবে তা হলো, ঐ ব্যক্তিকে জান্নাত এর কাপড় পরানো হবে। তারপর কবরে থাকা ব্যক্তিদের জন্য, জান্নাতের একটি দরজা খুলে দেওয়া হবে। তখন জান্নাতের বাতাস তার কাছে আসবে এবং সে জান্নাতের সুগন্ধ পাবে। ফলে সে আনন্দ অনুভব করবে। এ সম্পর্কে আমাদের রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন এবং এ বিষয়ে সহীহ হাদিসে রয়েছে।
চতুর্থত, যতদূর চোখ যায় ততদূর পযন্ত কবরকে সুসজ্জিত করা হবে। বরযাখের জীবন কবরের এ জীবন থেকে সম্পুর্ন ভিন্ন। আল্লাহ ঐ ব্যক্তির কবরকে অনেক বেশি সুসজ্জিত করে দিবেন।
এবং পঞ্চমত ঐ ব্যক্তিকে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও জান্নাতের সুসংবাদ দেওয়া হবে। আল্লাহু আকবার…
তারপর সেখানে একজন সুন্দর চেহারা, সুন্দর পোশাক এবং মিষ্টি স্বভাব এর লোক আসবে। আর কবরে থাকা ব্যক্তি বলবে, আপনি কে? আপনি দেখতে অনেক সুন্দর। আপনার কাছ থেকে একটি সুন্দর সুগন্ধ আসছে। আপনি কে, আপনার চেহারা অনেক চমৎকার।
তখন লোকটি উত্তর দিবে, “আমি তোমার ভালো কাজ। আমি সেই সালাত, যা তুমি আদায় করেছ। আমি সেই সদকা, যা তুমি দান করেছ। আমি সেই কুরআন, যা তুমি পাঠ করেছ এবং মুখস্ত করেছ। আমি সেই রোজা, যা তুমি পালন করেছ। আমি সেই সংগ্রাম, যেটা তুমি পার করেছ। আমি সেই দু’রাকাত সালাত, যা তুমি মধ্য রাতে পড়েছ। আমি তোমার সকল উৎকৃষ্ট আমল।” এই সুন্দর চেহারার মানুষ, বিচারদিন পর্যন্ত আমাদের সঙ্গী হবে।
আল্লাহ নিজের নামে শপথ করেছেন, ফাওয়া রাব্বিকা। তিনি কি বলেছেন? তিনি বলেছেন, আমি তাদেরকে শতভাগ জিজ্ঞেস করবো। আমি সবাইকে জিজ্ঞেস করবো, তারা কি করেছে। আমাদের কে সবকিছু সম্পর্কে, আমাদেরকেই জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।